বাংলাদেশের প্রাচীন নিদর্শন মহাস্থানগড়

প্রকাশঃ মার্চ ৫, ২০১৫ সময়ঃ ১২:১৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:১৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

behular basorবিশ্ব ঐতিহ্যের কথা আলোচনা হলে বাংলাদেশের যে সকল ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শনের সাক্ষাত পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম প্রাচীনত্বের দাবিদার বগুড়া জেলার অন্তর্গত পুন্ড্রনগর যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। গবেষকদের গবেষণায় জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে পুন্ড্রনগর পুন্ড্র রাজত্বকালের রাজধানী ছিল।

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন নিদর্শন। এই প্রাচীন নগরীটি বগুড়া জেলার অন্তর্গত শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। একসময় এই নগরী পুন্ড্রনগর নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে তা মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। ১৯৩১ সালে উদ্ধারকৃত ব্রাহ্মী প্রস্তর লিপিতে উল্লেখিত তথ্য থেকে ধারণা করা হয়। এই নগরীটি কমপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের স্থাপত্য কর্ম। যা আঠারশ শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহৃত হতো। করতোয়া নদীর তীরবর্তী পুন্ড্রনগরের দৈর্ঘ্য ৪৯৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০৫০ ফুট।

ধারণা করা হয় বহিঃশক্রর হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্যই তৎকালীন শাসকগণ এখানে পূনর্রাজত্বের দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। আর এই দুর্গকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে দুর্গ পুন্ড্রনগর। এই স্থানটি পছন্দের জন্য করতোয়া নদীর অবস্থানকেও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। কারণ আজকের মৃত করতোয়া সে সময় সাগরের মতো প্রশস্ত ছিল বলে প্রাচীন পুস্তক ও তথ্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। দুর্গটির চারপাশে উত্তোলিত পনের পঁচিশ মিটার উঁচু প্রাচীর বন্যা এবং বহিঃশক্রর থেকে সুরক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল বলে গবেষকরা ধারণা করেন।

বেশ কয়েকজন পুন্ড্রনগরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে এফ বুকানন হ্যামিলটন অন্যতম। যিনি ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মহাস্থান ভ্রমণে এসে স্থানটি পুন্ড্রনগর বলে চিহিৃত করেন। এরপর আসেন সি.জে. জোনেল ই. টি ওয়েস্ট ম্যাকেট এবং বেভোরিজ। ১৮৮৯ সালে আলেক্সান্ডার কানিংহাম সর্বপ্রথম মহাস্থানগড়কে পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর হিসেবে তথ্য ও প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত করেন। ১৯২০ সালে খনন কাজ শুরুর পূর্বে দুর্গের অভ্যন্তরে বিক্ষিপ্তভাবে চারপাশের চেয়ে উঁচু উঁচু মাটির টিবি দেখা যেত এবং চারপাশের প্রাচীর ছিল অরণ্য আচ্ছাদিত।

মাঝে মাঝে উন্মুক্ত দরজাও ছিল। দুর্গের দক্ষিণ পাশে ছিল মাজার এবং পরবর্তীকালের নির্মিত একটি মসজিদ। যা ১৭১৮-১৯ সালের নির্মিত বলে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়। বর্তমানে দুর্গের ভেতরে উঁচু উঁচু টিবি ও বিভিন্ন স্থাপনার নিদর্শন রয়েছে। দুর্গের প্রাচীরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে প্রবেশ পথ। এই প্রবেশ পথগুলোরও রয়েছে বিচিত্র নাম। যেমন-উত্তরের কাটা দুয়ার, পূর্বে ডোরাব শাহ তোবন, দক্ষিণে বুড়ির ফটক এবং পশ্চিমে তাম্র দরজা। এছাড়াও দুর্গের চতুর্দিকে প্রায় নয় কি.মি. এলাকা জুড়ে রয়েছে শতাধিক প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ।

মহাস্থানগড়ে ১৯২৮-২৯ খ্রিস্টাব্দে পদ্ধতিগত প্রত্নতাত্বিক খনন কাজ শুরু হয় ভারতীয় প্রত্নতাত্বিক জরিপ দলের কে.এন দিক্ষিতের তত্ত্বাবধানে। সে সময় জাহাজঘাটা, মুনিরঘন এবং বৈরাগীর ভিটা উন্মুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৩৪-৩৬ খ্রিস্টাব্দে বৈরাগীর ভিটা ও গোবিন্দ ভিটায় পূনরায় খনন কাজ পরিচালিত হয়।

এছাড়াও ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খননের ফলে মাজারের চারপাশে পরশুরামের প্রাসাদ, মানকালির ধাপ, জিয়ৎকুন্ড এবং দুর্গের উত্তরপাশের প্রাচীর উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে বিক্ষিপ্তভাবে পূর্ব ও উত্তর প্রান্তে খনন কাজ পরিচালিত হলেও তার প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ হয়নি বলে তথ্যসূত্রে জানা যায়। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ফ্রাঙ্কো যৌথ উদ্যোগে বৈরাগির ভিটায় পুনরায় এবং প্রবেশ পথগুলোতে খনন কাজ পরিচালিত হয়। বাংলা ফ্রাঙ্কোর উদ্যোগে ২য় দফায় দুর্গের পশ্চিমাংশে খনন কাজ পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলা থেকে বা যে কোন স্থান থেকে এক দিনে বগুড়া পৌছানো যায়। বগুড়াতে থাকার জন্য পর্যটন মোটেল আছে। সেখানে খাওয়া দাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। এছাড়া বগুড়া শহরে বিভিন্ন মানের অনেক আবাসিক হোটেল আছে।খাবার হোটেলও আছে বেশ কটি। এখানকার আকবরিয়া হোটেলের খাবারের মান যথেষ্ট উন্নত। এই হোটেলে থাকার ব্যবস্থাও আছে।সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন বগুড়ার এই ঐহিহাসিক স্থানটি।

প্রতিক্ষণ/ এডি/সুমন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G